কুমারী মাতা! পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীর কোলে সন্তান: হত্যার হুমকিতে পুলিশি নিরাপত্তায় হাসপাতালে চলছে চিকিৎসা সেবা

20-5

কুড়িগ্রামের সদর হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রী সন্তান প্রসব করেছে। বুধবার শাহিদা খাতুন (১২) নামের মেয়েটিকে প্রসব বেদনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে তার পরিবার। সেখানে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। শাহিদা খাতুন নাগেশ্বরী উপজেলার খামার হাসনাবাদ খেফনীটারী গ্রামের শাহ আলমের কন্যা। সে গোবর্দ্ধনকুটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী।

এ ঘটনায় ধর্ষক প্রতিবেশি জাকিরুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা করেছে মেয়েটির বাবা। পুলিশ আসামী ধরতে না পারলেও আসামী ও তার পরিবার মেয়েটির বাবাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। তাই ধর্ষিতা গর্ভবতী মেয়েটিকে নিয়ে দুই মাস ধরে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তার বাবা। হত্যার হুমকীতে হাসপাতালে পুলিশি নিরাপত্তায় সন্তানসহ চিকিৎসা নিচ্ছে মেয়েটি।

মেয়েটির পরিবার সুত্র জানায়, প্রতিবেশি প্রভাবশালী মৃত আবুবকর সিদ্দিকের পুত্র জাকিরুল ইসলাম শাহিদা খাতুনকে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করলে সে অন্তসত্বা হয়ে পড়ে। এক সময় পেট বাড়তে থাকলে শাহিদার পিতা শাহ আলম মেয়ের পেটে টিউমার হয়েছে ভেবে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর তার পেটে বাচ্চা আছে বলে ডাক্তার জানায়। তখন পরিবারটি শাহিদা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে সে জানায় জাকিরুল তাকে ভয় দেখিয়ে দীর্ঘ দিন ধর্ষন করে আসছিল। বাবা শাহ আলম জানান, আমি ঢাকায় রিক্সা চালাই। মেয়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে গ্রামে এসে প্রতিবেশির সহযোগীতায় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। তখন ডাক্তার জানায়, আমার মেয়ের পেটে বাচ্চা আছে। শাহিদার মা উপজন বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন। এই সুযোগে প্রতিবেশি জাকিরুল আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। মামলা করার পর থেকে আসামী ও তার পরিবার আমাকে নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। ভয়ে আমি অন্তস্বত্তা মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। হাসপাতালে সন্তান প্রসব হয়েছে শুনে আবারো হুমকি দিচ্ছে।  বাচ্চাটিকে মেরে ফেলার জন্য আমাকে ২ লক্ষ টাকা দেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে লোক মারফত।

মেয়েটির বড় বোন শাহারী খাতুন জানান, শাহিদার ঋতু শুরু হয়নি বলে তার পেট বাড়তে থাকা ও হাতে পায়ে পানি জমা দেখেও আমরা গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি অনুমান করতে পারিনি। পেটে টিউমার থাকতে পারে ভেবে গ্রামবাসীর সহায়তায় তাকে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়। সেখান ধরা পড়ে তার পেটে বাচ্চা। মামলা করে আমার পুরো পরিবার এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আসামীপক্ষ বাচ্চাটিকে মেরে ফেলতে চাচ্ছে। এমন অবস্থায় আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক নজরুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে যখন নিয়ে আসা হয়েছিল তখন বাচ্চা ও মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। বয়স কম হওয়ায় শারিরিক গঠন সন্তান প্রসবের উপযুক্ত ছিল না। ডাক্তার-নার্সদের দক্ষতায় তাদের বাঁচানো গেছে। মেয়েটির শারিরিক অবস্থা এখনও নাজুক। তাকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। মেয়েটির বাবা বাচ্চাটিকে হত্যার হুমকি পেয়ে নিরাপত্তার আবেদন করলে, স্থানীয় পুলিশকে জানিয়ে হাসপাতালে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী থানা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) খান মো. শাহ্রিয়ার বলেন, বিষয়টি খুবই অমানবিক। আসামি পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা যায়নি। তবে চেষ্টা অব্যাহত আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *