আদিত্য-সুরজের বাড়িতে তল্লাশি

বলিউডের অভিনেত্রী জিয়া খানের রহস্যময় মৃত্যুর দুই বছর হতে চলল। শুরুতে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলা হলেও, পরে জিয়া খানকে হত্যার অভিযোগে বলিউডের বিতর্কিত অভিনেতা আদিত্য পাঞ্চোলি ও তাঁর ছেলে সুরজ পাঞ্চোলির বিরুদ্ধে মামলা করেন জিয়ার মা রাবেয়া আমিন। জিয়াকে হত্যার পর আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে বলে দাবি করেন রাবেয়া। সম্প্রতি জিয়া খান হত্যা মামলায় আদিত্য ও সুরজের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই।
২০১৩ সালের ৩ জুন গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় জিয়া খানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয় তাঁর বাসা থেকে। আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে তাঁর প্রেমিক সুরজ পাঞ্চোলিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিছুদিন কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান অভিনেতা সুরজ পাঞ্চোলি। পরবর্তী সময়ে বোম্বে উচ্চ আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন জিয়ার মা রাবেয়া আমিন। আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার নেয় সিবিআই। সেই থেকে জিয়া খানের মৃত্যু আত্মহত্যা নাকি হত্যা তা খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে সিবিআই। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি আদিত্য ও সুরজের বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই।
এ প্রসঙ্গে সিবিআইয়ের একজন মুখপাত্রের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, সিবিআইয়ের দুটি দল মুম্বাইয়ে আদিত্য পাঞ্চোলি ও তাঁর ছেলের বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালিয়েছে। এই দলে দিল্লি সিবিআই ইউনিটের কয়েকজন কর্মকর্তাও ছিলেন। তল্লাশির সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করা হয়েছে। জিয়া খান হত্যা মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই সেগুলো যাচাইবাছাই করবে। মামলার চলমান তদন্তকাজের অংশ হিসেবেই এই তল্লাশি চালানো হয়েছে।

জিয়া খানের মৃত্যুর পর শুরুতে তদন্তভার নেয় জুহু পুলিশ। পরে বোম্বে উচ্চ আদালতের দুই বিচারক ভিএম কানাড়ে ও পিডি কোড়ে বলেন, কেউ জিয়া খানের বাড়ির জানালা দিয়ে ঢুকে তাঁকে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ জন্য যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তাঁরা মতামত দেন, জিয়া খানের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য হত্যার বিষয়টিকে জুহু পুলিশ যথাযথভাবে তদন্ত করেনি। এ জন্য বোম্বে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পায় সিবিআই।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৩ জুন মুম্বাইয়ের জুহুতে নিজ বাসা থেকে জিয়া খানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। কয়েক দিন পর প্রেমিক সুরজ পাঞ্চোলিকে দায়ী করে জিয়ার লেখা সুইসাইড নোট খুঁজে পান তাঁর বোন। পরে সেটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন জিয়ার মা রাবেয়া আমিন। এর দুদিন পর জিয়ার আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় সুরজকে গ্রেপ্তার করে মুম্বাই পুলিশ। কিছুদিন জেলের চার দেয়ালে বন্দী থাকার পর জামিনে মুক্তি পান বলিউডের প্রভাবশালী ও বিতর্কিত অভিনেতা আদিত্য পাঞ্চোলির ছেলে সুরজ।
জিয়া খান শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম অভিনয় করেছিলেন ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দিল সে’ ছবিতে। এরপর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০০৭ সালে অভিনয় করেন রাম গোপাল ভার্মার ‘নিঃশব্দ’ ছবিতে। ছবিটিতে অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে অভিনয় করে সবার নজর কাড়েন জিয়া। পরে অভিনয় করেন ‘গজনি’ (২০০৮) ও ‘হাউসফুল’ (২০১০) ছবিতে। জিয়া খানের বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যে। ২০১৩ সালে মা রাবেয়া আমিনের সঙ্গে যুক্তরাজ্য ছেড়ে মুম্বাইয়ে থাকা শুরু করেন তিনি। থাকতেন জুহু বিচ-সংলগ্ন সাগর সংগীত নামের একটি অ্যাপার্টমেন্টে।
যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বলিউডে ডুবন্ত ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক দিন থেকেই হতাশায় ভুগছিলেন জিয়া খান। ২০১২ সালেও একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কবজির রগ কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও, সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলেন বলিউডের উঠতি এ অভিনেত্রী।
২০১৩ সালের ৩ জুন মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে জিয়া সর্বশেষ ফোনে কথা বলেছিলেন সুরজের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছিল। এমনকি জীবনের শেষ চিঠিতে প্রেমিক সুরজের বিষয়ে নানা গুরুতর অভিযোগ করে গেছেন জিয়া। সেগুলোর মধ্যে প্রতারণা, ধর্ষণ ও গর্ভপাতের মতো বিষয়ও ছিল। জিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও বয়সে ২০ বছরের বড় এক নারীর সঙ্গে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন সুরজ। পাঞ্চোলি পরিবারে গয়না সরবরাহ করতেন ওই নারী। সুরজের অনেক অত্যাচার মুখ বুঁজে সইলেও প্রেমিকের কাছ থেকে প্রতারণার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি জিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *